আমাদের এই সমাজে অনেক ধরনের মানুষ আছে। তাদের মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- উত্তম-মধ্যম ও অধম। উত্তম নিশ্চিন্ত মনের নির্ভয়ে সকলের সঙ্গে মিশতে পারে। কিন্তু যারা মধ্যম তারা সর্বদাই সকলের থেকে তফাতে চলেন। তিনি কখনোই উত্তমের সঙ্গে মিশতে পারেন না তাদেরকে বেশি উচ্চতর মনে করে আবার অধমের সঙ্গে মিশতে পারেন না নিজেদের মর্যাদাহানির ভয়ে। তারা মনে করে এই নিম্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বা মিশলে তাদের সম্মানহানি ঘটতে পারে। ফলে আত্মসম্মানের ভয়ে তারা সবার থেকেই দূরত্ব বজায় করে চলে। তারা থাকে নিজের ছন্দে, নিজের তালে।
আমাদের এই সমাজে যারা উত্তম শ্রেণীর মানুষ তারা সংকীর্ণচেতা নয়, তারা উদারচেতা তাদের মন সংকীর্ণতা মুক্ত। তাদের মন বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। ফলে তারা নিজের তালে বা নিজেদের ছন্দে চলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। তাই এরা উচ্চ নিচ, ইতর -ভদ্র ভেদে সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মিশতে পারে ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের উদারচেতা মন কখনোই অধম জনের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলার ক্ষেত্রে মত দেয় না । তারা তাদের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস এর ভর করে অধমের সঙ্গে মিশতে পারে। অধমের সংস্পর্শে এসে তাদের খারাপ হয়ে যাবার ভয় থাকেনা। নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তার উপর আস্থাশীল বলে এরা অধমের সহচর্যে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে ফেলার ভয় পায় না।
এই সকল মানুষ গন নিজেদের মিথ্যা অহংকার ও আত্মমর্যাদার শিকলে নিজেদের আত্মসত্ত্বাকে আবদ্ধ না রেখে মিথ্যের শেকল ছিঁড়ে সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে সকলের সঙ্গে সানন্দে মিলিত হয় ।এইসব লোকেরা অনেকটা সূর্যের মতো , যার রশ্মি ভালো-মন্দ, আলো-অন্ধকার ভেদ করে সকলের স্পর্শ করে।
অন্যদিকে মধ্যম শ্রেণীর মানুষরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই বেঁচে থাকে ।তারা উত্তমের সাথে মিশতে পারে না। তাদের অধিক উত্তম ভেবে তাদের সঙ্গে এড়িয়ে যায় । তারা সর্বদায় হীনমন্যতায় ভোগে। অন্যদিকে তারা অধমের সঙ্গে মিশতে পারে না। তারা অধমকে অপাংক্তেয় বলে মনে করে ।এবং তাদের সহচর্যে নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যাবার ভয় পায় ।তারা নিজেদের অহংকারে নিজেরা বাঁধা পড়ে ,সেখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না। ফলে তারা অধম ও উত্তমের সঙ্গে একটা সমদূরত্ব বজায় রেখে চলে। ফলে এই মধ্যম শ্রেণীর মানুষরা বিচ্ছিন্নভাবে সকলের থেকে আলাদা হয়ে জীবন পথে এগিয়ে চলে।