বসুমতি, কেন তুমি এতই কৃপণা, কত খোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা ,
দিতে যদি হয় দিয়ে মা প্রসন্ন সুহাস, কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস ।
বিনা চাষে শস্য দিলে কি তাহাতে ক্ষতি, শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতি ,
আমার গৌরব তাহে সামান্যই বাড়ে, তোমার গৌরব তাহে নিতান্তই ছাড়ে ।
কৃষক গোষ্ঠীভুক্ত লোকে বহু পরিশ্রম ও কষ্টের দ্বারা এই পৃথিবীতে শস্য-শ্যামলা করে তোলে। এটি তাদের বেতন। কিন্তু কৃষক বসুমতিকে কৃপনা মনে করে । তারা বলে বসুমতী কৃপণা বলেই এত খোঁড়াখুঁড়ি করে শস্য কণা লাভ করতে হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের শস্য উৎপাদন করতে হয়। তাই তার আশা বসুমতি বিনা পরিশ্রমে যদি শষ্য লাভ করে তবে বসুমতি সঙ্গে সঙ্গে তার ও কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু বসুমতি হেসে বলেন যে, এতে বসুমতির গৌরব কিছু বারলেও কৃষকের গৌরব নিত্যান্তই কমে যায়। কারণ এতে কৃষকের কোন কৃতিত্ব থাকে না। এতে সকল কৃতিত্ব শুধুমাত্র ধরিত্রীর।
জীবন প্রবাহমান । আর এই প্রবাহমানতার অপর ধর্মই হলো জীবন। এই জীবনের পথে চলতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । জীবনে কোন বড় কাজ করতে গেলে জীবনপথে নানা বাধা বিঘ্ন আসে । সেগুলিকে পার করে তবেই সাফল্য লাভ করা সম্ভব। সাফল্য পেতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম ও কষ্ট সাধন করতে হয় । প্রচুর পরিশ্রম ও কষ্ট সাধন করে পাওয়া সাফল্যের মধ্যে কষ্ট জনিত গ্লানি থাকলেও তাতে কোন লজ্জা নেই । কারণ তা তাদের কষ্টে অর্জিত ধন। এবং এই কষ্টে অর্জিত ধনের মধ্যে এক পূলক আছে । কিন্তু সাফল্য সহজলভ্য হলে সেই সাফল্যের আনন্দ ও পুলকের মাধুর্য অনেক কমে যায় । পরামুখাপেক্ষী হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে কোন মর্যাদা ও সম্মান নেই ।
তাই জীবনের কঠিন পথের চড়াই উতরাই পেরিয়ে অশেষ শ্রম ও কষ্ট সহ্য পাওয়া ধনই ক্ষুদ্র হলেও শ্রেয় ও তা অনেক বেশি সম্মানজনক।