” মন রে কৃষিকাজ জানো না
– রামপ্রসাদ সেন
এমন মানব জমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলতো সোনা “
ভূমিকা
যে – কোন জাতি ও দেশের সামগ্রিক বিকাশলাভের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশক হলো তার সংস্কৃতি মানুষের শিক্ষাদীক্ষা,আচার-আচরণের বিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি জাতি নিজের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে তবে সংস্কৃতির এই চিরপ্রবহমান স্রোতে বালুচরের ন্যায় আজ স্থান করে নিয়েছ অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি দামামা বিশেষ করে যুবসমাজকে কুশিক্ষার পঙ্কিল সলিলে নিমজ্জিত করেছে।
সংস্কৃতির সংজ্ঞা
কোন বিশেষ মানব গোষ্ঠী বা জাতি তার সার্বিক জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে যে বিশিষ্ট আচরণগুলো প্রতিফলন ঘটায় তা নিয়ে গড়ে ওঠে সেই সমাজ ও সংস্কৃতি। সাহিত্য- সংগীত- শিল্পকলা সংস্কৃতির বিষয়বস্তু। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে লোকিক সমাজের রুচিশীলতা, সৌন্দর্যবোধ, শিল্পভাবনা, জীবন-যাপন শৈলী- সবই প্রকাশিত হয় সাধারণ ভাষায় বলা চলে, সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা থেকে বৃহত্তম এর দিকে অগ্রসর হল সংস্কৃতি, সমাজ বিকাশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ
” অপসংস্কৃতি ” শব্দটি দ্বারা কুরুচিকর নিম্নমানের সংস্কৃতিকে চিহ্নিত করা যায় । কোন জাতি ভাষা ,আচার-আচরণে, শিল্প-সাহিত্যে, পোশাক-আশাকে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের, যখন নিম্নমানের পরিচয় পাওয়া যেতে থাকে তখন তাকে অপসংস্কৃতি বলা চলে। ধর্ম হলো সংস্কৃতি কিন্তু অন্ধ কুসংস্কার হলো অপসংস্কৃতি। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা প্রতিমুহূর্তে শিকার হচ্ছে অপসংস্কৃতির জীবনযাত্রার আজকের অপসংস্কৃতিরই দান।
অপসংস্কৃতি কারণ
ভারতীয় জনজীবন তথা অর্থনীতিতে অনুপ্রবিষ্ট অসামাঞ্জস্য তাই হলো অপসংস্কৃতি মূল কারণ। দেশের এক বিপুলসংখ্যক যুবমন্ডলী কর্মস্থানের অনিশ্চয়তার বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিকার হচ্ছে ও অপসংস্কৃতি জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। শিক্ষিত যুবকের অসহায়ত্ব,বেকারত্ব ও বিচ্ছিন্নতার সুযোগে সাহিত্য চলচ্চিত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নোংরামি পূর্ণ, রুচিহীন রঙিন কাহিনী পরিবেশিত হচ্ছে তাদের মানসিক প্রশান্তি দানের নামে।
যুবসমাজের ওপর প্রভাব
বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে যুবসমাজকে মূলত শ্রেণীর সাথে সন্তুষ্টির সাথে অপসংস্কৃতি অনুগ্রহ করে তোলা হচ্ছে। অত্যন্ত সুকৌশলে যুবসমাজের মাদকদ্রব্য, অশ্লীল পোস্ত চলচ্চিত্রের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে; দূরদর্শনের বিকৃতি রুচিপূর্ণ কিছু অনুষ্ঠান সম্প্রসারিত করে জীবনকে অপসংস্কৃতির করে যুব মনকে অপসংস্কৃতির কোন অনুগামী করে তোলা হচ্ছে। ফলে যুবক-যুবতীদের কথা-বার্তায়, পোশাক-পরিচ্ছদে, ভাষায় কুরুচিকর ও কদর্যতা প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রতিকার
দেশের যুব শক্তিকে অপসংস্কৃতির প্রভাব মুক্ত করে একমাত্র সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। শুধু নীতিকথা প্রচার করে নয় সরকারের পক্ষ থেকে আইন করে কুরুচিকর অনুষ্ঠানের সম্প্রচার অনুরোধ করতে হবে, মাদক দ্রব্য বা অশ্লীল সাহিত্য বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
উপসংহার
পার্থিব ও ভোগসর্বস্ব, জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা, নৈতিকতার অভাব, মূল্যবোধের পতন, নীতিহীন মতবাদ প্রচার, অসাধু ও অর্থ গৃধ্নু ব্যবসায়ীদের অপপ্রয়াস এবং সর্বাপেক্ষা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসন বজায় রাখার প্রয়াস কে কেন্দ্র করেই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত পরিবারতন্তের ভিত্তিতে জমাট বাঁধছে অপসংস্কৃতির চাক। বস্তুতপক্ষে, অপসংস্কৃতির ক্ষতিকর দিকটি সর্বাগ্রে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।তবেই অপসংস্কৃতি নামক সামাজিক অভিশাপটিকে চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হবে ভারতবর্ষ পুনরায় নিজের প্রাচীন সংস্কৃতিমান সত্তা নিয়ে জাগ্রত হতে পারবে।