ভূমিকা:-
আমার বর্তমান সময় হল উন্নতি আর সমৃদ্ধির সময়। আর সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা কমবেশি বিজ্ঞানকে বাহন করেই এগিয়ে চলেছি। তবে বর্তমানে এত উন্নত হয়েও নানান ভাবে নানান কুসংস্কারের আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সেগুলি হল অভিশাপ স্বরূপ। ফলতই বারে বারে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে মানুষের অগ্রগতি। এমনকি দেশের উন্নয়নের পথ ও তাতে অবরুদ্ধ হয়ে চলেছে। তবেই এই সকল কুসংস্কারকে দূরীকরণের কিছু উপায় আছে প্রধানত কুসংস্কার টিকে থাকার কারণগুলোকে অপসারিত করলেই কুসংস্কার অপসৃত হবে। আমরা মুক্ত হব কুসংস্কারের অভিশাপ থেকে।
কুসংস্কার কি:- যাবতীয় বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ হীন অন্ধবিশ্বাসে ভরপুর অযৌক্তিক মানব মনের এক বিশেষ চিন্তা ভাবনা প্রসূত দিক হল কুসংস্কার। এগুলি সম্পূর্ণরূপে ভন্ড কার্যকারণ সম্পর্ক হীন। তাইতো আইনস্টাইন কুসংস্কারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন-
“It thus undefined source of hope and fear which is the genesis of irrational superstition.”
কুসংস্কারের সূচনা:-
কুসংস্কারের সূচনা ঠিক করে কিভাবে তা আজ আর বলা সম্ভব নয়। তবে যবে থেকে মানুষের মনের মধ্যে দানা বেঁধেছে ভয় বা কিছু পাওয়ার আশা তবে থেকেই জন্ম হয়েছে কুসংস্কারের। জানা যায় প্রাচীন মানুষ শিকারেযাওয়ার আগে দেব সাধনা কালে নানা নিয়ম মেনে চলত। তা হতেই কুসংস্কারের সূচনা। আর দীর্ঘকাল ধরে মানুষের মনের ভয় আর আসা তাকে লালিত-পালিত করেছে।
মানব জীবনে কুসংস্কারের কিছু উদাহরণ:-
বর্তমানে মানব জীবনে ছড়িয়ে আছে কুসংস্কারের নানান উদাহরণ। যেমন বলা যায় মানুষ আজ ও ঝাড়ফুঁক তুকতাক এ বিশ্বাসী। আজও দেখা যায় বহু শিক্ষিত মানুষ এক টেবিলে 13 জন বসেন না। মই এর নিচ দিয়ে পেরিয়ে যান না, কালো বিড়াল রাস্তা কাটলে আজ ও অনেকে দুই পা পিছিয়ে হাঁটেন। বা জলে কেউ দাগ কাটেন না। ঋণ-গ্রস্ত হওয়ার ভয়ে অনেকে দরজার চৌখােট বসেন না। নিজের ছায়াও অনেকেই দেখেন না। এভাবেই মানব জীবনে নানান ভাবে কুসংস্কার টিকে থাকতে দেখে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য ‘ সভ্যসাচি’ কবিতায় বলেছেন-
“মেনে শত বাধা টিকটিকি হাঁছি , টিক দাঁড়ি নিয়ে আজ ও বেঁচে আছি।”
কুসংস্কারের অভিশাপ বা কুফল:-
বর্তমান জীবনে যেহেতু কুসংস্কার টিকে আছে তাই স্বভাবতই এর নানান কুফল ও এসে পড়ে। যেমন- প্রথমত, কুসংস্কার অনেক সময় মানুষের মনোবলকে চির ধরিয়ে দেয়। যেমন- বলা যায় পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কোন অশুভ ইঙ্গিতে অবশ্যই পরীক্ষার্থীর মন ভীত হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়তঃ, কুসংস্কার অনেক সময় মানুষের মনের মনোবলকে কখনো নিঃশেষ করে দেয়। মানুষ নিজের মনোবল বা কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলে। ফলে সে আর সাফল্য লাভ করতে পারে না। তৃতীয়তঃ, কুসংস্কার অনেক সময় মানুষের প্রাণ ও কেড়ে নেয়। যেমন- সাপের কামড়ে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। তবে তার মৃত্যুর আশঙ্কায় বেশি। চতুর্থত, কুসংস্কার অনেক সময় আবার দেশের উন্নয়ন কে ও অবরুদ্ধ করে। যেমন- বলা যায় যদি মানুষ ভেদ চালিত সংস্কারের চালিত না হতো তবে ভারত আর ও আগে স্বাধীনতা লাভ করত। – এভাবে বর্তমানের নানান কুসংস্কার টিকে থাকায় এর নানান অভিশাপ আমরা ভোগ করতে বাধ্য হচ্ছি।
কুসংস্কার টিকে থাকার কারণ:-
বর্তমানে কুসংস্কার টিকে থাকার কতিপয় কারণ রয়েছে। যেমন বলা যায়, প্রথমত : আজ ও মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার অভাবে কুসংস্কার টিকে আছে। দ্বিতীয়তঃ, মানুষের মনের দীর্ঘ প্রচলিত বিশ্বাসকে ভেঙে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না বলেই আজ ও কুসংস্কার টিকে আছে। তৃতীয়তঃ, বিজ্ঞান কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই কুসংস্কার টিকে আছে। চতুর্থত, গণমাধ্যমের ভীরুতা ও সরকারি পদক্ষেপের অভাব আজ ও কুসংস্কারকে টিকিয়ে রেখেছে। পঞ্চমত, বিভিন্ন স্বার্থপর মানুষ ব্যক্তিগত মঙ্গলের জন্য কুসংস্কারকে টিকিয়ে রেখেছে।
কুসংস্কার অভিশাপ দূরীকরণের উপায় :-
কুসংস্কারের অভিশাপ দূরীকরণের প্রধানতম উপায় হল- প্রথমত : বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার দ্বারা মানব মনের সংস্কারকে ভেঙে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত : বিজ্ঞানের কার্যকারণ সম্পর্ক সকলকে বোঝাতে হবে। তৃতীয়ত : এক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও সহকারী পদক্ষেপ এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও স্বার্থপর মানুষদের দমন করা প্রয়োজন। এভাবেই কুসংস্কারের অভিশাপকে কাটিয়ে উঠতে হবে।
সভ্যতা সংস্কৃতি বনাম কুসংস্কার:-
বিখ্যাত কবি Tennyson বলেছেন-
“There live many faiths in honest doubt”।
আর এর ই বাড়বাড়ন্তে আজ ও কুসংস্কার ঠিকে আছে। তবে কুসংস্কার দূরীকরণের নামে যেন না মানব মনের ও জীবনের সভ্যতা সংস্কৃতি বর্জিত না হয়। অর্থাৎ বরণডালা মঙ্গলঘট স্থাপন সন্ধ্যা আরতি আজান ঘণ্টাধ্বনি এগুলি কুসংস্কার নয়। এদের অভিশাপ ও নেই। তাই কুসংস্কারের প্রবাহে এরা যেন মুছে না যায়। এরা মুছে গেলে মানুষ হারিয়ে ফেলবে জীবনের সূক্ষ্ম মূল্যবোধ। তাই কুসংস্কার অবশ্যই দূর করতে হবে, তবে সভ্যতা সংস্কৃতি গুলিকে অব্যাহত রাখতে হবে।
কুসংস্কার দূরীকরণে গৃহীত ব্যবস্থা:-
বর্তমান দেশে বিদেশে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নানান ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেমন- পশ্চিমী দেশে অবৈজ্ঞানিক বীভৎসতা এর জন্য জেল জরিমানা হয়। কিন্তু ভারতে এখনো কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে অধুনা নরবলির বিরুদ্ধে নানান অভিযান শুরু হয়েছে।
উপসংহার :-
কুসংস্কার হল মানব মনের ভাবনা জাত বিষয়। তাই মানসই কুসংস্কারের সৃষ্টি করে। আর সেই কুসংস্কার নানান অভিশাপে মানব জীবনে সুপ্ত করে অবনতির মুখে ঠেলে দেয়। তবে মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে যদি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবর্তীর্ণ হওয়া যায় তবে ধীরে ধীরে একে মুছে ফেলা যাবে। তখনই মানুষ পাবে কুসংস্কার বর্জিত এক সমাজ |
সমাপ্ত