ভূমিকা
‘বুদ্ধি যার, বল তার’ – অতি পরিচিত প্রবচন। বুদ্ধিমান ব্যক্তির জীবনে কৃতকার্য হয়। কিন্তু কার বুদ্ধির বহর কত খানি তা বোঝা যাবে কিভাবে? কাজেই বুদ্ধি পরিমাপের ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে শতাব্দীর প্রথমদিকে ফরাসি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনে তাঁর সহযোগী সিমোঁর সাহায্যে বুদ্ধি মাপার একক অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যার নাম ‘বিনে -সিমোঁ স্কেল’। পরে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারমান ‘বিনে-সিমোঁ স্কেল’- কে পরিমার্জিত করে বুদ্ধি পরিমাপের যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তাকে বলা হয় আই.কিউ বা ইন্টেলিজেন্ট কোসেন্ট। বর্তমান বুদ্ধি বহর যাচাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল কুইজ কনটেস্ট, যার মাধ্যমে সাধারন মানুষও যাচাই করতে পারে তার সাধারন জ্ঞানের দৌড় কতটা। তবে মনে রাখতে হবে আই.কিউ. টেস্ট আর ক্যুইজ কনটেস্ট পদ্ধতি, প্রকরণ, প্রয়োগ ও ফল নির্ণয় কোন দিক থেকে এক নয়। প্রথমটি গাণিতিক পদ্ধতি, দ্বিতীয়টি প্রতিযোগিতামূলক।
‘কুইজ’ শব্দের অর্থ
এদেশে কিছুদিন হলো প্রচলিত ‘কুইজ’ শব্দটা । পশ্চিমী দুনিয়ায় শব্দটার যখন প্রথমত উৎপত্তি হয়, তখন কুইজ বলতে ছিট গ্রস্ত লোককে বোঝাত। তারপর শব্দের অর্থ গত প্রসার ঘটল, কুইজ তার পূর্ব অর্থ ত্যাগ করে ঠাট্টা-মশকরা বা হেঁয়ালি অর্থে ব্যবহৃত হতে লাগলো। ভাষায় ও লোকমুখে শব্দটা প্রয়োগ হতে হতে এখন যে অর্থ এসে দাঁড়িয়েছে, তা হলো গোটা কতক প্রশ্ন।
‘কুইজ’ শব্দের উৎপত্তির ইতিহাস
‘ কুইজ’শব্দের উৎপত্তির ইতিহাস বড় বিচিত্র। ডাবলিন শহরের এক নাট্যশালার ম্যানেজার জেমন ড্যালি নেশার ঝোঁকে বন্ধুদের কাছে চ্যালেঞ্জ রেখেছিলেন যে এক রাতের মধ্যে ইংরেজি শব্দ কোশে নতুন একটি শব্দের সংযোজন করবেন তিনি। এই চ্যালেঞ্জকে ঘিরে বাজিও ধরা হয়েছিল ।পরের দিনই ড্যালি তৎপর হয়ে পড়লেন। যেসব ছোকরারা বিজ্ঞাপনের কাগজ সেঁটে বেড়ায় তাদের দিয়ে শহরময় দেয়ালে দেয়ালে নোটিশ বোর্ডে যে শব্দটি খড়ি মাটি দিয়ে ড্যালি এক রাত্রির মধ্যে লিখিয়ে নিলেন ,সেটি আমাদের প্রবন্ধের শিরোনামের শব্দ ‘ক্যুইজ’।
সকাল থেকেই ডাবলিনের লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে ফিরতে লাগল ‘কুইজ’ শব্দটা। শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কৌতুহলী মনে উঁকি দিল নানা বিস্ময় প্রশ্ন ।কুইজ কি হতে পারে ? নাটক ? সভা সমিতি ? খেলাধুলা ? না অন্য কোন কিছু ? প্রকৃতপক্ষে কুইজ কি? কে জানে, কে বা উত্তর দেবে? শব্দ- স্রষ্টা ও জানেন না। অথচ মজার ব্যাপার, রসিকতার ফলে পৃথিবী পেল এমন এক নতুন শব্দ যার অর্থ নিয়ে তখনকার মানুষ দিশাহারা হলেও আজকালকার মানুষ তা দিয়ে তার জ্ঞানের দৌড়টা স্বচ্ছন্দে পরখ করে নিতে পারে।
কুইজ কনটেস্টের সূচনা ও প্রসার
রেডিও-টিভিতে কুইজ অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয়। প্রথম কুইজের প্রচার শুরু হয়েছিল মার্কিন পত্রিকা সেরিবনার ম্যাগাজিনে। আমাদের দেশে ও বেতার ও দূরদর্শনে কুইজ প্রতিযোগিতার এখন খুবই রমরমা। দূরদর্শনে ‘প্রশ্ন-মঞ্চ’, ‘স্পোর্টস কুইজ’, ‘ডিসকভার ইন্ডিয়া’, ‘কুইজ টাইম’ অতি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এদের মধ্যে কুইজ টাইমের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিজ্ঞান, খেলাধুলা, সাধারন জ্ঞান, বিশ্ব জ্ঞান প্রভৃতির উপর অসংখ্য কুইজ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘আনন্দমেলা’, ‘কিশোর ভারতী’, ‘কিশোর জ্ঞান- বিজ্ঞান’- এর মত কিশোর পত্রিকাগুলো কুইজ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কিশোর মনের বিকাশে বিশিষ্ট ভুমিকা নিয়েছে।
কুইজ প্রতিযোগিতার পদ্ধতি
কুইজ প্রতিযোগিতার পদ্ধতিটি নিতান্ত জটিলতা মুক্ত সহজ কথায়,খুব সাদামাঠা। কুইজ প্রতিযোগিদের বলা হয় কুইজার্ড । দু-দল কুইজার্ড কে বসিয়ে দেওয়া হয় অনেকটা মুখোমুখি। মাঝে থাকেন ক্যুইজ পরিচালক বা পরিচালিকা। তিনি প্রতিযোগীদের কাছে প্রশ্ন রাখেন। তার প্রশ্ন পরিবেশনের কৃতিত্ব, বাচনভঙ্গি এবং অনুষ্ঠান পরিচালনার ক্ষমতা প্রতিযোগিতাকে সরস ও চিত্ত কর্ষক করে। প্রদত্ত প্রশ্নের উত্তর যে দল দিতে সক্ষম হয়, সে দল সরাসরি নম্বর পায়, তারা উত্তরদানে ব্যর্থ হলে প্রতিপক্ষ দলের কাছে প্রশ্নটি রাখা হয়,তারা উত্তর দিতে পারলে বোনাস নম্বর পায়, আর তারাও ব্যর্থ হলে কোন দলই নম্বর পায় না। তখন পরিচালকই উত্তরটি জানিয়ে দেন। এভাবে প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলতে থাকে আর প্রাপ্ত নম্বরের অঙ্ক ও এগোতে থাকে।
উপযোগিতা
কুইজ জ্ঞান- বিদ্যা বুদ্ধির বহর যাচাই করতে সাহায্য করে। জানার কৌতূহলকে দেয় বাড়িয়ে। জ্ঞানের পরিধিকে করে প্রসারিত। গ্রন্থাদি, পত্রপত্রিকা পাঠের আগ্রহকে বাড়িয়ে দেয়। মনের বিকাশ হয়। দলগত ভাবে কিছু বলা ও ভাবার মনোভাব গড়ে ওঠে।বোধবুদ্ধির বিকাশ মানসিক শক্তির প্রখরতাকে বর্ধিত করে।
উপসংহার
প্রতিযোগিতা বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিচার ও মূল্যায়ন হবে ন্যায় সংগত ও নিরপেক্ষ। তা না হলে প্রতিযোগিতার সুফলের চেয়ে কুফল অনেক বেশি। কুইজ কনটেস্ট ও একই কুফল নিয়ে আসবে যদি না স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মূল্যায়নের তুলাদন্ডে ন্যায় সঙ্গত বিচারের গুরুদায়িত্ব স্কন্ধে তুলে নেন ক্যুইজ পরিচালক।