ভূমিকা
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৬0 বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আজও সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার সম্ভব হয়নি। দেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ এখনো নিরক্ষরতা ও অশিক্ষার অন্ধকারে বাস করছে। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বহু প্রচার অতীতে করা হয়েছে এবং বর্তমানেও করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় জনসমাজ শিক্ষায় এখনো বহুগুণ পিছিয়ে আছে। কোন গণতান্ত্রিক দেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষিত জনসমাজ। দেশবাসী শিক্ষিত না হলে গণতন্ত্রের উদ্দেশ্যেই ব্যর্থ হয়ে যায়। তাছাড়া, শিক্ষা ব্যতিরেকে কোন জাতি বা দেশ উন্নতি করতে পারে না।
শিশু শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
শিশুদের শিক্ষিত করে তোলা অবশ্য প্রয়োজনীয়। দারিদ্রতার ফলে দেশের বেশিরভাগ শিশুই বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। শিশু যদি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ না করে শ্রমজীবী হিসেবে পরিবারের জন্য অর্থোপার্জনের কাজে নিযুক্ত হয় তাহলে তার শৈশব বিকৃত ও নষ্ট হয়ে যায় ও তার স্বাভাবিক বিকাশ হয় না। এই জন্য প্রাথমিক শিক্ষার উপর সরকার জোর দিয়ে বেতন বিহীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছেন। কারণ, মা-বাবার দারিদ্র যাতে শিশুকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না করে। শিশু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হয়েছে, কারণ অনেক সময় দরিদ্র মা-বাবা তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে তাকে শ্রমিক হিসাবে কাজে নিযুক্ত করেন। গ্রামে প্রায় সব পরিবারে প্রত্যেক সদস্যই জীবিকা অর্জনের কাজে নিযুক্ত থাকে। কিন্তু সরকারের প্রচেষ্টা সত্বেও বহু ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশু শিক্ষার পথে বাধা
শিশু শিক্ষার পথে মূল বাধা হল- দারিদ্র ও সচেনতার অভাব। দারিদ্র্যের জন্য মা-বাবা তাদের সন্তানদের শিক্ষার খরচ সামান্য হলেও তা বহন করতে অক্ষম হন। তাঁরা ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য দিতে পারেন না এবং তাদেরকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক চাহিদা মেটাবার চেষ্টা করেন। অসচেতনতার ফলে তাঁরা ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলতে চান না। মনে করেন, শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা বেশি জরুরি। এই মনোভাবের ফলে ও দারিদ্র্যের কারণে অনেক মেধাবী শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়।
মিড ডে মিল প্রকল্প
দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষিত করার জন্য মিড্-ডে মিল প্রকল্পের সূচনা হয় ১৯৯৫ সালে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ নিউট্রিশনাল সাপোর্ট টু প্রাইমারি এডুকেশন এটি সূচনা করে। সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত এই প্রকল্পে শিশুদের বিদ্যালয়ে মাথাপিছু ১০০ গ্রাম করে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০০২ সালে প্রকল্প অনুসারে রান্না করা খাদ্য ও সরবরাহ করা শুরু হয় এবং প্রাইমারি ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয় এর আওতায় আসে। ২০০৪ সালে বলা হয় এই খাদ্যের ক্যালোরির পরিমাণ ৩০০ এবং প্রোটিন ১২ গ্রাম ধার্য হয়। ২০০৬ সালে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রকল্প গুরুত্ব
এই প্রকল্প শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বাস্তবসম্মত ব্যবস্থায় ছোট ছোট অস্বচ্ছল পরিবারের স্কুলপড়ুয়ারা নানা ভাবে উপকৃত হচ্ছে।
পুষ্টিকর খাদ্য তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করছে, রান্না করা সুখাদ্যের আকর্ষনে তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসছে ও খাদ্য গ্রহণের পরিচ্ছন্ন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে এই মিড ডে মিল প্রকল্প । খাদ্য তাদের ক্ষুধা নিবারণ করছে তারা পাঠে মনঃসংযোগ করতে পারছে । এছাড়া অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে একসঙ্গে খাদ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের সামাজিক শিক্ষা সম্ভব হচ্ছে । শৈশব থেকে ভিন্ন ধর্ম বা জাতের সহপাঠীর সঙ্গে একত্রে পড়া, খেলা ও খাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে এক সুস্থ মানসিকতা। যেখানে সামাজিক ভেদাভেদ তুচ্ছ হয়ে যায় ও সকলের প্রতি সমান ভালোবাসা জন্মায়।
উপসংহার
মিড ডে মিল প্রকল্প অনেকাংশেই সফল হয়েছে কারণ মা-বাবারও চাইছেন তাদের শিশুরা যেন বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাদ্যের সুবিধা পায় । তাই তারা ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়েয পাঠাচ্ছেন । সম্প্রতি মিড-ডে-মিল নিয়ে নানা দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে এবং এই খাদ্যের মধ্যে মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে । এই প্রকল্পে যদি নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাহলে গোটা প্রকল্প অর্থহীন হয়ে পড়বে। বিদ্যালয়ে বিনামূল্যের খাদ্য খেয়ে যদি শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে সর্বশিক্ষা অভিযান ব্যর্থ হবে ও স্কুল ছুটের সংখ্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।