ভূমিকা :
আমি সমস্ত রকম খেলাই ভালবাসি, বিশেষ করে যেগুলি মাঠের খেলা বা ‘আউটডোর গেমস”। তবে সব খেলাকে ছাপিয়ে ফুটবলই আমার সবচেয়ে প্রিয়।
কেন এত প্রিয় :
কলকাতার ফুটবল লিগকে ঘিরে বাঙালির আবেগ বহু যুগ ধরে বহুচর্চিত কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোটিং আর তাদের সমর্থকদের উৎসাহ,আনন্দ, ঝগড়া বাংলার চিরকালীন ক্রীড়াসংস্কৃতির অঙ্গ। পরাধীন ভারতে মোহনবাগানের শিল্ড জয় ভারতীয়দের মনে এক জাতীয়তাবাদী চেতনা ও আশাবাদের জন্ম দিয়েছিল। আমাদের ফুটবলের ইতিহাসে সে কাহিনি সোনার অক্ষরে লেখা আছে । এই জাতীয়তাবোধ আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। একসময় কলকাতার মাঠকে শাসন করেছেন শিবদাস ভাদুড়ী, গোষ্ঠ গোপালের মতো খেলোয়াড়। পরবর্তীকালে সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখেন শৈলেন মান্না,অমেদ খাঁ,চুনি গোস্বামী, পি কে ব্যানার্জি, তুলসীদাস বলরাম, জার্নেল সিং ,সুভাষ ভৌমিক, সুরজিত সেনগুপ্ত, গৌতম সরকার ,প্রসূন ব্যানার্জি ,সুব্রত ভট্টাচার্য ,শিশির ঘোষ, কৃষানু দে, বাইচুং ভুটিয়া প্রমুখ ।
ভারতের মহিলাদের মধ্যে ফুটবল চালু করার ক্ষেত্রে আরতি ব্যানার্জী নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য । তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন সুশীল ভট্টাচার্য ,প্রেমাংশু ব্যানার্জী খ্যাতনামা প্রশিক্ষক । ২০১০ এবং ২০১২ সালে সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলও প্রমাণ করে যে তারাও ক্রমে এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে। এর আগেই অবশ্য ১৯৯১ সালে চীনে অনুষ্ঠিত মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপে ভারতীয় মহিলারা অংশ নেন,গর্বের বিষয় সেই দলে ন’জন বাঙালি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাঙালি হিসেবে এই ঘটনায় আমি গর্ববোধ করি।
ফুটবল খেলায় বিশেষ কোন সরঞ্জামের দরকার পড়ে না। একটা মাঠ আর একটা ফুটবল হলেই চলে। আর দরকার একদল সঙ্গীর। নিজেরা দুটি দলে ভাগ হয়ে গিয়ে শুরু করা যায় খেলা। এই খেলায় আমরা শরীরচর্চা ,সহমর্মিতা ,একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতা ,লড়াই করে জেতার ইচ্ছে, শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতা – সবই পাই। তাই অন্য যতই খেলা থাক না কেন, বাঙালির কাছে সব খেলার সেরা ফুটবল।
নিয়মকানুন ও পদ্ধতি :
ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী দুপক্ষের ১১ জন করে মোট ২২ জন খেলোয়াড় থাকেন । আর থাকেন খেলার পরিচালক রেফারি এবং তাঁর সহযোগী হিসেবে দু’জন লাইন্সম্যান । মাঠের দুদিকে থাকে দুটি গোলপোস্ট। এক পক্ষ অপর পক্ষের এলাকায় প্রবেশ করে আক্রমণ চালায় ।লক্ষ্য প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেওয়া ।মাঠে বিভিন্ন জায়গায় খেলোয়াড়েরা তাঁদের নির্দিষ্ট ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করেন। গোলকিপার, ব্যাক, ফরওয়ার্ড, স্ট্রাইকার – এমন বিভিন্ন অবস্থানগত পরিচিত থাকে তাদের ।দুটি অর্ধে ৪৫ মিনিট করে খেলা হয় , মাঝে থাকে 15 মিনিটের বিরতি ।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খেলোর মীমাংসা না হলে অতিরিক্ত সময় খেলানো হয় ।তাতেও মীমাংসা না হলে ট্রাইবেকার এর মাধ্যমে খেলার নিষ্পত্তি করা হয় ।প্রতিটি দলের একজন ‘কোচ’ বা ফুটবল প্রশিক্ষণ থাকেন। প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা মতোই তিনি দলকে সাজান, নিয়ন্ত্রণ করেন, উৎসাহিত করেন।
উপসংহার :
বর্তমানে ভারতীয় ফুটবল যে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে সে কথা ঠিক। তবে চেষ্টা চলছে দ্রুত উন্নতি করার। ফুটবলে কিছুদিন আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমরা সাফল্য পেয়েছি। এশিয়ান গেমস (১৯৫১) শুধু নয় , এক সময় অলিম্পিক গেমসের ফুটবলেও (১৯৫৬) ভারত যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছিল। ১৯৬২-তে বিদেশের মাঠে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও এশিয়া – শ্রেষ্ঠ হওয়ার মতো চমকপ্রদ ঘটনা ভারতীয় ফুটবলের বিশ্বক্রীড়া মানচিত্রে উজ্জ্বলতর করৃ তোলে। ফুটবল খেলা শুধু নয়, ফুটবলের ইতিহাসচর্চাও আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। অতীতের সব বিখ্যাত ফুটবল ম্যাচের অবিস্মরণীয় লড়াই , সাফল্য, কিংবদন্তী ফুটবলারদের জীবনপণ সংগ্রামের ইতিহাস আমাকে উদ্বুবুদ্ধ করে। আমি ফিরে যায় সেইসব সোনালি অতীতের দিনগুলিতে অনুভব করি সুতীব্র উত্তেজনার স্পর্শ। ময়দানে বার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল ম্যাচ দেখার উন্মাদনায় বারবার ছুটে যাই, ফুটবলশিল্পের আনন্দকে লক্ষ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিই। খবরের কাগজ থেকে খেলার খবর গুলি সংগ্রহ করা ,তথ্য ও পরিসংখ্যানগুলি সাজিয়ে রাখা আমার প্রিয় শখ । মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোর্টিং, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব – সহ কলকাতার সবকটি বড় ফুটবল ক্লাব সম্পর্কেও আমার অদম্য কৌতূহল রয়েছে । আমি চাই, এই খেলায় আমাদের দেশ বিশ্বের প্রথম সারিতে এগিয়ে আসুক । বিশ্বকাপ ফুটবলের অঙ্গনে বেজে উঠুক আমাদের জাতীয় সংগীত।