সবার জন্য শিক্ষা : সর্বশিক্ষা অভিযান

বাংলা রচনা

ভূমিকা

উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ জীবনে সম্পূর্ণতা লাভ করে। শিক্ষার আলোক ব্যতীত মানব জীবন অন্ধকার। সাক্ষরতা আকাঙ্ক্ষা মানুষের জন্ম জন্মান্তরে স্বপ্ন। সভ্যতার ঊষালগ্নে ও মানুষ চেয়েছিল অশিক্ষার অন্ধ-কারাগার ভেঙে শিক্ষার আলোকে স্পর্শের জাজ্জ্বল্যমান হতে। তারপর সেই সুদূর অতীত থেকে আজকের এই বর্তমান কাল। কেটে গেছে বহু বছর। কিন্তু চরম আক্ষেপের বিষয় আজও ভারতবর্ষের সকল নাগরিকবৃন্দ কে উপযুক্ত শিক্ষার আলোকে স্বশিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অথচ মানব সভ্যতার ইতিহাস কিন্তু একের পর এক নতুন দিগন্তের সন্ধান পেয়েছে। বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার মানব জীবনে এনেছে আধুনিকতার জোয়ার। ঘটেছে বিস্ময়কর উন্নতি। তবুও এখনো পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-গঞ্জে, বিভিন্ন জেলায় এখনও বহু মানুষ আছেন যারা সম্পূর্ণ নিরক্ষর। কুসংস্কার, অজ্ঞতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন তাদের জীবন। শিক্ষা ছাড়া তাদের পক্ষে কখনোই নিজেকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। তাই তাদের স্বাক্ষর করে তুলতে গৃহীত হয়েছে এক বিশেষ সাক্ষরতা অভিযান। উদ্দেশ্য – ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ । এরই নাম ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’।

প্রাচীন ভারতের শিক্ষা

প্রাচীন ভারতের নানাভাবে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষায়তনের শিক্ষা ছাড়াও সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ছিল ব্যাপক লোক শিক্ষার ব্যবস্থা। কিন্তু ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে এদেশে লোক শিক্ষাধারা গেল লুপ্ত হয়ে। শিক্ষা বন্দি হয়ে রইলো সামান্য কিছু শহরের মানুষের গৃহে। এরপর ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ স্বাধীন হলো। কিন্তু তখনও জাতীয় সরকার একটি সুস্পষ্ট শিক্ষা নীতি ঘোষণা করে দেশের মধ্যে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিলেন না। কেটে গেল সুদীর্ঘ ৪0 বছর। কিন্তু এ সম্পর্কে বিশেষ কোনো চিন্তা-ভাবনা করা ও হলো না। শিক্ষাব্যবস্থা আগের মতই একই রকম রয়ে গেল। একেকটি রাজ্যে একেকরকম শিক্ষা ব্যবস্থা। কারো সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য রইল না কারো। এর ফলে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকাংশেই বিনটে হলো।

সর্বশিক্ষা অভিযান বর্তমান অবস্থা

পরবর্তী পর্যায়ে এই হৃত শিক্ষা পুনরুদ্ধারে বহু সরকারি উদ্যোগ, বেসরকারি উদ্যোগ গৃহীত হবার ফলে কিছু উন্নতি হলেও সর্বোপরি সর্বসাফল্যলাভ এখনো সাক্ষরতার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে প্রথম পর্যায়ে উদ্যোগী হন রাষ্ট্রসংঘ।১৯৯০ সালকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গ্রহণ করা হয় বলিষ্ঠ সংগ্রামী পদক্ষেপ। দ্বিতীয় পর্যায়ে অগ্রবর্তী হয়ে ইউনেস্কো ইউ.এন.ডি.পি. ওয়ার্ল্ড ব্যাংক (বিশ্ব ব্যাংক) এবং ইউনিসেফ। তারা সমাজের সকল স্তরের – ‘প্রতিটি মানুষের জন্য শিক্ষা’ এই উদ্দেশ্যে এক যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করল। কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার। সর্বোপরি সার্থকতা লাভ করেনি। শিক্ষার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও বাস্তবতা অর্জন করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। ‘ভিশন- ২০২০’ নামক সরকারি রিপোর্টে দেখা যায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে সাক্ষরতার হার বর্তমানে এরকম পশ্চিমবঙ্গ ৬৯.২২%, কেরল ৯০.২২%, হিমাচল প্রদেশ ৭৭.১৩%। এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার সর্বাপেক্ষা কম। তাই এ রাজ্যে সর্ব শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে।

সাক্ষরতার উদ্দেশ্যে গৃহীত কর্মসূচি

শিক্ষার হার বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তথা এই রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক সম্প্রসারণ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পগুলি গৃহীত হয়েছে। কিন্তু তাতেও সর্বস্তরের সকল মানুষের জন্য নূন্যতম শিক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এরাজ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। ব্যয় করা হয়েছে প্রচুর অর্থ। কিন্তু তাতেও বেশ কিছু লোক নিরক্ষরই থেকে গেছে। বইপত্রের অভাবে, দারিদ্র্যের কারণে স্কুল ছেড়েছে এমন ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যাও কম নয়। এজন্য সরকারি অনুদান, বিনামূল্যে বই সরবরাহ ইত্যাদি ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বিনামুল্যে চাউল- সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তাতেও সকলকে পড়াশোনার প্রতি আকৃষ্ট করা যায়নি। শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে আগ্রহী করা যায়নি। আইন প্রণয়ন করে শিশুদের শ্রমিকের বৃত্তি অবলম্বনের প্রচেষ্টাকে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গেছে আংশিক। সর্বশিক্ষা সার্থক উদ্দেশ্য পৌঁছানোর এ কেবল প্রথম ধাপ বলা যেতে পারে।

উপসংহার

আশা করা যায় পরবর্তী পর্যায়ে আরো অনেক নতুন কর্মসূচি গড়ে উঠবে। সার্থক রূপ পাবে সর্বশিক্ষা অভিযান। সফল হবে সকল প্রয়াস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top