সমাজের প্রতি ছাত্রদের কর্তব্য (The Duty of the Students towards the Society)

যে কোন কর্ম নিষ্পাদিত হয় প্রধানত দুটি ধারায় । একটি হলো কর্তব্য, অন্যটি দায়িত্ব । কর্তব‍্য আর দায়িত্ব সাধারণভাবে সমর্থক মনে হলেও দুটির মধ্যে কিছু ভিন্নতা বর্তমান । করণীয় কর্ম হলো কর্তব্য আর আরোপিত কর্ম হলো দায়িত্ব । সমাজের প্রতি প্রতিটি নাগরিকেরই দায়বদ্ধতা আছে। তবু ব্যক্তিগত ব্যস্ততা বা আনুষঙ্গিক কোন অসুবিধার অজুহাতে সমাজকল্যাণে আরোপিত কর্ম অনেকেই অবহেলা করতে পারেন, স্বার্থমগ্ন তায় এড়িয়ে চলতে পারেন।

ভূমিকা :

যে কোন কর্ম নিষ্পাদিত হয় প্রধানত দুটি ধারায়। একটি হলো কর্তব্য, অন্যটি দায়িত্ব । কর্তব‍্য আর দায়িত্ব সাধারণভাবে সমর্থক মনে হলেও দুটির মধ্যে কিছু ভিন্নতা বর্তমান। করণীয় কর্ম হলো কর্তব্য আর আরোপিত কর্ম হলো দায়িত্ব। সমাজের প্রতি প্রতিটি নাগরিকেরই দায়বদ্ধতা আছে। তবু ব্যক্তিগত ব্যস্ততা বা আনুষঙ্গিক কোন অসুবিধার অজুহাতে সমাজকল্যাণে আরোপিত কর্ম অনেকেই অবহেলা করতে পারেন, স্বার্থমগ্ন তায় এড়িয়ে চলতে পারেন। কিন্তু কর্তব্যে অবহেলা করা সহজ নয়। সামাজিক অনুশাসনের চেয়েও বিবেকের তীব্র দংশনে দংশিত হতে হয় ।সমাজের প্রতি দায় দায়িত্ব যা-ই বলি না কেন প্রকৃতপক্ষে সহৃদয় সামাজিক মানুষ কর্তব্য পালন করে থাকেন। সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে ,সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধন করলে প্রকৃতপক্ষে তা দেশের জাতির কল্যাণে পর্যবসিত হয়। তাই সমাজসেবা, সমাজকল্যাণ প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য।

ছাত্র জীবনের কর্তব্য পালনের প্রয়োজনীয়তা :

ছাত্র জীবন ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের প্রস্তুতির অধ্যায় ।ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ, অধ্যায়ন ছাত্রদের তপস্যা, এই বাণীটির সঙ্গে আমরা সুপরিচিত। পাঠ্য বিষয়ের প্রতি একাগ্র মনোযোগ দেওয়া, গভীর নিষ্ঠায় তার অনুশীলন ছাত্রজীবনের প্রাথমিক কর্তব্য সন্দেহ নেই। মেধা বা বুদ্ধি সকলের সমান থাকে না ,কিন্তু নিষ্ঠায় ও পরিশ্রমে প্রতিটি ছাত্র সাফল্য অর্জন করতে পারে। নিছক পরিশ্রমে অবশ্যই সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা,বা সি.ভি রমনের মত বৈজ্ঞানিক হওয়া যায় না, কিন্তু তার দৌলতে যোগ্যতা বা কর্মদক্ষতার একটি নির্দিষ্ট মান এ পৌঁছানো সম্ভব, ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের কল্যাণ সাধন করে মনুষ্য জন্ম কে সার্থক করে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র পরীক্ষায় সাফল্য লাভই শিক্ষিতের একমাত্র মানদণ্ড নয়। প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তিকে হতে হয় মনুষত্ববান। তাই মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশই ছাত্রসমাজের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিভিন্ন কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়েই সেটা সম্ভব। সমাজ সংসারের প্রতি মানুষের যে বহুবিধ কর্তব্য আছে ছাত্রজীবন থেকেই সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন হতে তার কিছু কিছু অংশ পালন করতে হয়।

পরিবারই সমাজ ও জাতির পাথমিক ভিত্তি , নাগরিক হওয়ার প্রস্তুতির প্রথম ক্ষেত্র। পারিবারিক জীবনের কর্তব্য পালন পরবর্তীকালে বৃহত্তর জীবনে যথার্থ ভূমিকা গ্রহণের প্রাথমিক পদক্ষেপ । পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি, তাঁদের নির্দেশ পালন জীবনের এই প্রাথমিক কর্তব্য পালনে যে ছাত্র বা ছাত্রী অবহেলা করে তারা জীবনে কোনদিন সফল হতে পারেনা । সেই সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য গুরুজনদের ও শ্রদ্ধা ভক্তি করতে হবে। ছোট ভাই বোনদের প্রতি ও তাদের কর্তব্য আছে ।

স্নেহ মমতাকে এখনো ভারতবর্ষের পারিবারিক জীবনের বিশেষ আদরণীয় গুন মনে করা হয় । স্নেহ মমতা বিকাশের উপর মনুষত্বের অন্যান্য দিকের উন্মেষ ও নির্ভরশীল। ছাত্রজীবনের যে অংশটি অধ্যায়নের সঙ্গে জড়িত ,সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রতি সশ্রদ্ধ আনুগত্য ছাত্রদের জীবনাচরণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। যাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজ জীবনে ছাত্রদের নিজেদের স্থানটিকে পেতে হবে, তাদের সমস্ত উপদেশ নির্দেশ সশ্রদ্ধচিত্তে গ্রহণ ও পালন না করলে সেই শিক্ষা কখনো সার্থক হবে না। তাদের বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মাবলী ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। সেটিও শিক্ষার অঙ্গ, তার উপর ও ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি সঠিকভাবে গড়ে ওঠা নির্ভরশীল।

ছাত্র জীবনে কর্তব্য পালনের বিভিন্ন দিক :

ছাত্রদের সমাজ জীবনের দায়-দায়িত্ব সম্বন্ধে ও সচেতন হতে হবে। পরিবার ও বিদ্যালয়ের গণ্ডির বাইরে সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছাত্রদেরও কম নয় ।বর্তমানে আমাদের দেশে উচ্ছৃংখল মনোভাব সংক্রামক ব্যাধির মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে । ছাত্ররা যদি তাতে গা ভাসিয়ে দেয় তবে তারা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। ছাত্ররা যে সমস্ত অঞ্চলে থাকে সেখানকার গঠনমূলক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ ছাত্র জীবনের অন্যতম আদর্শিক কর্তব্য। জনসাধারণ অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত দীর্ঘ অবকাশের দিনগুলোতে নৈশ বিদ্যালয়, গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে নিরক্ষরদের স্বাক্ষর করে তোলার প্রয়াস ছাত্র সমাজের একটি পবিত্র জাতীয় কর্তব্য। জাতীয় সেবা পরিকল্পনার মাধ্যমে অবশ্য ছাত্ররা সমাজকল্যাণের নানা কাজ করে থাকে এবং তাদের শিক্ষা দেয়।এই জাতীয় পরিকল্পনা কে আরো ব্যাপক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার :

যে দেশে সামাজিক কর্তব্যবোধ যত জাগ্রত এবং ব্যাপ্ত, সেই দেশ তত উন্নত ও শক্তিশালী সন্দেহ নেই। ইউরোপেই গুনেই প্রাচ্য ভূখণ্ডের তুলনায় সমৃদ্ধি লাভ করতে পেরেছে । ঠিক সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজের কাজ করতে আসা বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা আসেন তাদের প্রতি উদ্ধত্য তাচ্ছিল‍্য ও অবহেলা না দেখিয়ে তাদের সাহায্য করা, নিয়ম নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক বিধি পালন, জাতীয় বা সমষ্টিগত স্বার্থের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি – এগুলি ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে প্রাত্যহিক জীবনাচরণের অঙ্গ রূপে গণ্য । দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক্ষেত্রে আমরা অনেক অনগ্রসর। ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা যথেচ্ছভাবে লংঘন করা কে আমরা অনেক সময় দোসা বহ মনে করিনা। ছাত্রজীবন অনুশীলনের জীবন। শুধু বিদ্যাভাস অনুশীলন নয়, জীবন ও সমাজ চেতনার অনুশীলন ও তাদের কর্তব্য । কোন জাতি কখনোই সামাজিক কর্তব্যবোধ ছাড়া মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। তাই ছাত্রদের ভবিষ্যৎ জীবনকে উন্নত ও দীর্ঘ করতে হলে সমাজ নিষ্ট হতে হবে। তাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে –

‘স্বার্থমগ্ন যে জন, বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে,
সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে ‘।

স্বার্থ ত্যাগ করেই ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী মহৎ হয়েছেন ।জাতীয় কর্তব্যের কাছে আত্মস্বার্থ, ক্ষুদ্র জীবন তুচ্ছ করে দেশের সমাজের ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করাই ছাত্র সমাজের অন্যতম মুখ্য কর্তব্য


অনুরূপ প্রবন্ধ

  • ছাত্র জীবনে নিয়মানুবর্তিতা
  • ছাত্র সমাজের আদর্শ ও কর্তব্য
  • ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা
  • ছাত্র সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য

আরও পড়ুন


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts
Scroll to Top